আপনি যদি টেকনোলজি সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে থাকেন,তবে ডোমেইন শব্দটি নিশ্চই শুনেছেন।কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে,ডোমেইন কি?বা ডোমেইন নাম কি? এবং ডোমেইন কত প্রকার?আজকের এই পোস্টে আমি ডোমেইন সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করবো।যেনো আপনি সহজেই বুঝতে পারেন, What is Domain name in Bangla? । তো চলুন,শুরু করা যাক।
ডোমেইন কি?
ডোমেইন হলো কোনো ওয়েবসাইটের নাম।আমাদের যেমন নাম আছে।প্রত্যেক ব্যক্তির আলাদা আলাদা নাম আছে।ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের আলাদা আলাদা নাম আছে।আর এই নামকেই বলা হয় ডোমেইন।ডোমেইন হলো কোনো একটি ওয়েবসাইটের পরিচয়।আমাদের যেমন নামে পরিচয়,ঠিক তেমনি একটি ওয়েবসাইটের পরিচয় প্রকাশ পায় তার ডোমেইন নামে।আপনারা যখন কোনো ওয়েবসাইট বানাবেন,তখন প্রথমেই প্রয়োজন হবে একটি ডোমেইন নাম।ডোমেইন না হলে তো আমাদের ওয়েবসাইটে মানুষ ভিজিট করতে পারবে না।
আপনারা এখন আমার এই লেখাটি যে ওয়েবসাইটে পড়ছেন,এই ওয়েবসাইটের একটি ডোমেইন নাম আছে।সেটি হচ্ছে www.techybn.com । এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ডোমেইন নামের ক্ষেত্রে এখানে ডোমেইন নাম কোনটি? www. নাকি techybn নাকি .com । এখানে ডোমেইন হলো techybn । আর .com হলো এক্সটেনশন। ডোমেইন নামের ক্ষেত্রে একটি এক্সটেনশন থাকে।ডোমেইনের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের এক্সটেনশন থাকতে পারে।যেমন আপনি হয়তো অনেক ওয়েবসাইটের নামের শেষে .net , .org , .xyz দেখেছেন।এগুলো হলো এক্সটেনশন। পুরো পৃথিবীর মানুষ যে ইন্টারনেটের ভিতর আবদ্ধ সেটা বুঝতেই www ব্যবহার করা হয়।তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার সময় www ব্যবহার না করে শুধু ডোমেইন নাম এবং এক্সটেনশন ব্যবহার করেও ভিজিট করা যাবে।
আপনি হয়তো কখনো এমন দেখে থাকবেন যে, www এর সামনে http কিংবা https থাকে। http বা https হলো একটি প্রটোকল। http এবং https ও www নিয়ে আমি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
http মানে কি?
http হলো একটি প্রটোকল। http এর পূর্ণরূপ হলো , “Hyper Text Transfer Protocol” । অনলাইন বা ইন্টারনেটে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ করার জন্য http ব্যবহার করা হয়।আপনি যেকোনো ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে http বা https দেখতে পারবেন।যদি অ্যাড্রেস বারে এইটা শো না করে,তবে অ্যাড্রেস বারে ক্লিক করলেই ওয়েবসাইটের লিংকে http কিংবা https দেখতে পারবেন। http পুরোপুরি সিকিউর না। http এর মাধ্যমে ডাটা সম্পূর্ণ এনক্রিপশন ভাবে স্থানান্তর করা যায় না।যেসব ওয়েবসাইট http প্রটোকল ব্যবহার করে,সেসব ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে অ্যাড্রেস বারের পাশে একটি লাল রঙের তালা দেখা যায়।এর মানে বুঝায় যে উক্ত ওয়েবসাইটটি সিকিউর না।
https মানে কি?
http এর সিকিউর ভার্সন হলো https । https এর পূর্ণরূপ , “Hyper Text Transfer Protocol Secure” । http এর শেষে S দ্বারা বুঝায় Secure । অর্থাৎ এই প্রটোকলটি সিকিউর। https আমাদের ব্রাউজার এবং ওয়েবসাইটের মাঝে SSL এর সাহায্যে সকল ডাটা এনক্রিপ্ট করে স্থানান্তর করে থাকে।SSL এর পূর্ণরূপ হলো Secure Socket Layer । আমরা কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর ব্রাউজারে অ্যাড্রেস বারের পাশে যদি কোনো সবুজ রঙের তালা দেখতে পাই,তাহলে বুঝবো যে সেই ওয়েবসাইটটি Secure ।
www কি?
www এর পূর্ণরূপ হলো world wide web । পুরো পৃথিবীর মানুষকে ইন্টারনেট এর আওতায় আনার জন্য www ব্যবহার করা হতো।আগে আমরা প্রায় সবাই কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় www লিখে তারপর ওয়েবসাইটের নাম লিখে ভিজিট করতাম।কিন্তু এখন শুধু http বা https লিখে যেকোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায়।ডোমেইনের ক্ষেত্রে www ব্যবহার করার কোনো বাধা বাধ্যকতা নেই।
সাবডোমেইন কি?
সাবডোমেইন হলো ডোমেইন নামের সামনে কোনো শব্দ জুড়ে দিয়ে তৈরি করা আলাদা কোনো নাম।সাবডোমেইন কি এটা আপনাকে বুঝাতে একটি উদাহরণ দেই। আমার এই ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম হলো techybn.com । এখন যদি আমি এই ডোমেইন এর সামনে blog যুক্ত করে দেই,তবে একটি সাবডোমেইন তৈরি হয়ে যাবে।অর্থাৎ, blog.techybn.com । techybn.com হলো মূল ডোমেইন নাম।আর blog যুক্ত করে দেয়ার পর আলাদা একটি ডোমেইন নাম তৈরি হয়েছে।কিন্তু এটির মূল হলো techybn ডোমেইন নামটি।আশা করি সাবডোমেইন কি বুঝতে পেরেছেন।
ডোমেইন এক্সটেনশন
ডোমেইন নামের শেষে . এর পরে যে শব্দটা থাকে সেটি একটি ডোমেইনের এক্সটেনশন।এক্সটেনশন ছাড়া কোনো ডোমেইন নাম পূর্ণতা পায় না।এক্সটেনশন যোগ করার পরেই একটি শব্দ বা নাম ডোমেইনে রূপান্তর হয়।যেমন আমার এই ব্লগের ডোমেইন নেম হলো techybn.com । এখানে এক্সটেনশন হলো .com । তবে এক্সটেনশন কিন্তু শুধু .com না।অনেক ধরনের এক্সটেনশন রয়েছে।নিচে কয়েকটি ডোমেইন এক্সটেনশন উল্লেখ করলাম।
- .com
- .co
- .net
- .org
- .info
- .tech
- .me
উপরে উল্লিখিত ডোমেইন এক্সটেনশনগুলো ছাড়াও আরো অনেক এক্সটেনশন রয়েছে।তবে এই ডোমেইন এক্সটেনশনগুলো জনপ্রিয়।
আরো পড়ুন :
ডোমেইন কত প্রকার?
ডোমেইনকে আপনি কিভাবে এবং কোন কাজে ব্যবহার করবেন,তার উপর ভিত্তি করে প্রধানত ৪ ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।নিচে আমি ডোমেইন ৪টি ভাগ কি কি এবং এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করবো।
- TLD Domain
- gTLD Domain
- SLD Domain
- CCTLD Domain
এবার এই সবগুলো ডোমেইন নিয়ে আলোচনা করবো।
TLD Domain
TLD Domain এর পূর্ণরূপ হলো Top Level Domain । অর্থাৎ,যে ডোমেইনের এক্সটেনশনগুলো টপ লেভেলের হয়ে থাকে,সেগুলোকে টপ লেভেল ডোমেইন বলা হয়।কিছু টপ লেভেল ডোমেইন হলো, .com , .net , .org , .info ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক টপ লেভেল ডোমেইন আছে।
gTLD Domain
gTLD Domain এর পূর্ণরূপ হলো Generic Top Level Domain । যেসব ডোমেইনের এক্সটেনশন কোনো দেশকে নির্দেশ করে না,সেগুলোকে gTLD Domain বলা হয়।কিছু gTLD Domain হলো, .com , .net , .org ।
SLD Domain
SLD Domain এর পূর্ণরূপ হলো Sub Level Domain । যখন কোনো ডোমেইনে সাবডোমেইন যুক্ত করা হয়,তখন তাকে SLD Domain বলা হয়।যেমন : blog.techybn.com । এটি একটি SLD Domain । এখানে blog হলো সাবডোমেইন।
ccTLD Domain
ccTLD Domain এর পূর্ণরূপ হলো Country Code Top Level Domain । অর্থাৎ,যখন কোনো ডোমেইন কোনো দেশকে টার্গেট করে,তখন তাকে ccTLD Domain বলা হয়। কিছু ccTLD Domain হলো : .bd = Bangladesh , .pk = Pakistan , .in = India , .us = USA ।
এক্সপায়ার্ড ডোমেইন কি?
আমরা যখন ডোমেইন কিনি,তখন আমাদের ১ থেকে ১০ বছরের জন্য কিনতে পারি।কেউ যদি ডোমেইন কেনার পর সেটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর রিনিউ না করে,তবে তাকে এক্সপায়ার্ড ডোমেইন বলে। এক্সপায়ার্ড ডোমেইনে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।কারণ,যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আগে ডোমেইন কিনেছিলেন,তারা এই ডোমেইন এর অনেক ব্যাকলিংক তৈরী করেছেন।আর ডোমেইন পুরনো হওয়ার কারণে এর DA/PA বেড়েছে।তাই এসব ডোমেইন কিনে খুব দ্রুত গুগল র্যাঙ্ক করা যায়।
তবে এক্সপায়ার্ড ডোমেইন কেনার সময় চারিদিক বিবেচনা করে ডোমেইন কেনা উচিত।কারণ,সেই ডোমেইন যদি ট্রেডমার্ক করা থাকে,তবে ব্যান খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আবার,ওই ডোমেইন নিয়ে কেউ যদি পূর্বে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে,তবে সেই ডোমেইন না কিনাই ভালো।এছাড়াও গুগল পেনাল্টি, এডসেন্স ব্যান ইত্যাদি থাকলে ডোমেইন কেনা ঠিক না। এক্সপায়ার্ড ডোমেইন কেনার সময় স্প্যাম স্কোর দেখে কেনা উচিত। এক্সপায়ার্ড ডোমেইন নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো পরবর্তী কোনো পোস্টে।
ডোমেইন ব্যবহার করা হয় কেনো?
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন,ডোমেইন ব্যবহার করতে হবে কেনো?আমি যদি ডোমেইন না কিনি,তবে কি সমস্যা হবে?উত্তরটি হলো : প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের আলাদা আলাদা আইপি অ্যাড্রেস(IP ADDRESS) রয়েছে।আমরা যদি কোনো ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস লিখে ব্রাউজারে এন্টার করি,তাহলে সেই ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে।যেমন : গুগলের আইপি অ্যাড্রেস হলো : 172.217.168.238 ।আপনি যদি এই আইপি অ্যাড্রেস ব্রাউজারে লিখে এন্টার করেন,তবে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে চলে যাবেন।
একেক ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস একেক রকম।প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস মনে রাখা সম্ভব না।তাই ডোমেইন নাম ব্যবহার করা হয়।যেনো যেকোনো ওয়েবসাইটের নাম সহজেই মনে রাখা যায়,এবং ভিজিট করতে কোনো সমস্যা না হয়।
কেনো ডোমেইন কিনবো?
একটি ডোমেইন নেম কেউ বা জন্য প্রতিষ্ঠান যদি একবছরের জন্য কিনে,এবং একবছর পূর্ণ হওয়ার পর যদি রিনিউ না করে তবে অন্য কেউ কিনতে পারে।তখন সেটা হয় এক্সপায়ার্ড ডোমেইন।কিন্তু মেয়াদ থাকা অবস্থায়,সেই ডোমেইনটি অন্য কেউ কিনতে পারে না।আমরা যেকোনো ডোমেইন সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য কিনতে পারি।এখন কথা হলো, আমরা কেনো ডোমেইন কিনবো?আগেই বলেছি,ডোমেইন হলো আমাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের নাম।ডোমেইনের সাহায্যেই কেউ আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবে।
আমরা আমাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন কিনতে পারি।অথবা কেউ চাইলে ভালো কোনো ডোমেইন নেম কিনে রাখতে পারে,এবং পরবর্তীতে সেটা অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া ডোমেইন এভাবে অনেকেই কিনে থাকে,অতঃপর সেটা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে।আপনি ডোমেইন এভাবে বিক্রি করার জন্য হলেও কিনতে পারেন।
কিভাবে ডোমেইন কিনবো?
ডোমেইন সম্পর্কে অনেক আলোচনা করলাম।এখন আপনার যদি ইচ্ছে হয় নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইট খুলার,তবে আপনি ডোমেইন কিনতে পারেন।কিংবা ডোমেইন বিজনেস করার জন্য হলেও ডোমেইন কিনতে পারেন।কিন্তু ডোমেইন কিনবেন কিভাবে?ডোমেইন কেনার জন্য অনেক বিশ্বস্ত দেশী এবং বিদেশি ওয়েবসাইট রয়েছে।আপনি চাইলে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডোমেইন ক্রয় করতে পারেন।তবে ডোমেইন ক্রয় করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনবেন,তারা যেনো আবার ব্যবসা গুটিয়ে চম্পট না মরে।সবকিছু বিবেচনা করেই ডোমেইন কিনবেন।নিচে আমি কয়েকটি বিশ্বস্ত ডোমেইন রেজিস্টার কোম্পানির নিয়ে আলোচনা করবো।
বিশ্বস্ত ডোমেইন রেজিস্টার কোম্পানি
আপনি যদি বিশ্বস্ত কোনো কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনতে চা। তবে আপনার কাছে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড থাকতে হবে।এক্ষেত্রে আপনি যেকোনো কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। Visa , Mastercard , Amex , Discover ইত্যাদি।অথবা আপনার যদি দেশী কোনো ব্যাংকের ডুয়াল কারেন্সি কার্ড থাকে,তবে সেটি দিয়েও ডোমেইন কিনতে পারবেন।
Namecheap
আপনি যদি কোনো ব্যবসা বা ব্লগ বানানোর জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার কথা ভাবেন,তবে নিশ্চিন্তে Namecheap থেকে ডোমেইন বা হোস্টিং কিনতে পারেন।অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান Namecheap থেকে ডোমেইন হোস্টিং কিনে রিসেল করে থাকে।এছাড়া আপনি বিশেষ সব দিনে Namecheap থেকে অনেক ভালো অফার পেয়ে যাবেন।ডোমেইন এবং হোস্টিং এর উপর অনেক ছার দিয়ে থাকে এই কোম্পানিটি।পুরো পৃথিবীর অনেক বড় বড় ওয়েবসাইট এই কোম্পানি থেকে তাদের ডোমেইন এবং হোস্টিং ক্রয় করে থাকে।
আরো পড়ুন :
GoDaddy
আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কোনো কোম্পানি থেকে ডোমেইন কেনার কথা ভাবেন,তবে Godaddy থেকে কিনতে পারেন।Godaddy ডোমেইন , হোস্টিং বিক্রয় করে থাকে।এই কোম্পানিটির প্রসার অনেক বিস্তৃত।অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং কিনে থাকে।
উপরে যে ২টি কোম্পানি সম্পর্কে আলোচনা করলাম,এগুলো বিশ্বের সবথেকে বিশ্বস্ত কোম্পানি।এর অনেক বছর যাবত ডোমেইন এবং হোস্টিং নিয়ে ব্যবসা করে আসছে।আপনি চাইলে এসব কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনতে পারেন।এদের কাস্টমার সার্ভিস অনেক ভালো।তাছাড়া আপনার যদি কার্ড না থাকে,তবে দেশী কোনো কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনতে পারেন।এক্ষেত্রে বিকাশ,নগদ বা রকেট দিয়ে পেমেন্ট করে ডোমেইন কিনতে পারবেন।
ডোমেইন কিনতে সতর্কতা
ডোমেইন কেনার সময় আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।নয়তো আমরা আমাদের পছন্দের ডোমেইন নামটি হারিয়ে ফেলতে পারি কিংবা ডোমেইন কেনার টাকা বৃথা জলে ভেসে যাবে।নিচে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি,যেগুলো ডোমেইন কেনার সময় আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার।
- ডোমেইন রিনিউ
- ডোমেইন ট্রেডমার্ক
- ডোমেইন সিকিউরিটি
- ডোমেইন ট্রান্সফার
ডোমেইন রিনিউ
নতুন ডোমেইন কেনার সময় আমাদের এই বিষয়টি লক্ষ রাখা উচিত।কারণ,আমরা যদি একটি লম্বা সময় যাবত ব্যবহারের জন্য একটি ডোমেইন ক্রয় করি,তবে রিনিউ করার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।কারণ,ডোমেইন আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিনে থাকি,সেই সময় শেষে যদি ডোমেইনটি রিনিউ করা না হয়,তবে ডোমেইনটি এক্সপায়ার হয়ে যায়।ফলে আমরা আমাদের ডোমেইনের মালিকানা হারিয়ে ফেলি।তাই ডোমেইন কেনার পর আমাদের রিনিউ করার সময় মনে রাখা উচিত।
আবার,আমরা যদি এমন কোনো কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনি,যে কোম্পানিতে প্রথম বছর ডোমেইনের দাম অনেক কম থাকে,কিন্তু ডোমেইনের রিনিউ ফি অনেক বেশি, সেসব কোম্পানি থেকে ডোমেইন না কেনাই ভালো।তাই,ডোমেইন কেনার সময় আমাদের ডোমেইনের রিনিউ চার্জ এবং পরবর্তীতে ডোমেইন ট্রান্সফার করা যাবে কি না এসব বিষয় আগে থেকেই জেনে নিতে হবে।
ডোমেইন ট্রেডমার্ক
ডোমেইন কেনার সময় আমাদের দেখতে হবে ডোমেইনটি আগে থেকে ট্রেডমার্ক করা কি না।কেউ যদি ডোমেইন কেনার সময় সেই ডোমেইনটি লাইসেন্স করে কিনে থাকে,তবে ডোমেইনটি তার ট্রেডমার্ক করা হয় যায়।সেই ডোমেইনটি অন্য কারো কেনা বা ব্যবহার করার কোনো অধিকার থাকে না।আইনগত ভাবে উক্ত ডোমেইন নামটি তার মালিকের অধীনে থেকে যায়।ট্রেডমার্ক যুক্ত ডোমেইন কিনলে আমাদের ডোমেইনটি ব্যান হতে পারে বা আমাদের ডোমেইন কেনার টাকাটি জলে ভেসে যেতে পারে।এর থেকে বেশী হলে,মামলা বা জরিমানা অব্দি হতে পারে।
ডোমেইন সিকিউরিটি
ডোমেইন কেনার সময় আমাদের ডোমেইনের সিকিউরিটির দিকটি বিবেচনা করতে হবে।অনেক ডোমেইন কোম্পানির ডোমেইনের সিকিউরিটির জন্য আলাদা টাকা নিয়ে থাকে।একটু খরচ হলেও সিকিউরিটি ঠিক রাখা জরুরি।
ডোমেইন ট্রান্সফার
ডোমেইন ট্রান্সফার মানে হলো এক কোম্পানি থেকে ডোমেইন অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার করে নিয়ে যাওয়া।ধরুন,আমি একটি কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনলাম।যদি সেই কোম্পানির সার্ভিস আমার পছন্দ না হয়,তবে আমি চাইলে সেই ডোমেইনটি অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার করে নিতে পারবো।মনে রাখবেন,ডোমেইন ট্রান্সফার করে অন্য যে কোম্পানিতে নিয়ে যাবেন,সেখানে ডোমেইন রিনিউ করার ফি দিতে হবে।এতে করে ডোমেইনের মেয়াদ ১ বছর বেড়ে যাবে।
তাই আমরা যে কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনবো,সেই কোম্পানিতে ডোমেইন ট্রান্সফার করার সুবিধা রয়েছে কি না তা আগে থেকে জেনে নিতে হবে।যদি কোনো লোভী কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনি,এবং তারা অধিক লাভের আশা,এবং কাস্টমার না হারানোর জন্য ডোমেইন ট্রান্সফার করার সুবিধা না দেয়,তবে তো আমরা আমাদের ডোমেইন নিয়ে সমস্যায় পড়ে যাবো।তাই এই দিকটি বিবেচনা করতে হবে।
কেমন ডোমেইন কিনবেন?
আপনি মূলত ২ কারণে ডোমেইন কিনবেন।হতে পারে আপনার কোনো ব্যবসা বা কোনো ব্লগ আছে,তার জন্য ডোমেইন কিনতে পারেন।নয়তো,আপনি যদি ডোমেইন বিজনেস করতে চান,তখন ডোমেইন কিনে রাখতে পারেন,এবং ভবিষ্যতে ভালো দামে ডোমেইন বিক্রি করতে পারেন।
ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন
আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইট বানান,তবে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি ডোমেইন কিনতে হবে।ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন কেনা কেনো জরুরি সেটা আমি ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।কারণ,ডোমেইন আমাদের ওয়েবসাইট বা ব্যবসার নাম ধারণ করে।তাছাড়া,আমাদের ওয়েবসাইট অ্যাকসেস করতে হলে ডোমেইন নাম অত্যাবশ্যক।
আরো পড়ুন :
ডোমেইন দিয়ে টাকা ইনকাম
ডোমেইন বিজনেস করেও কিন্তু অনেক টাকা ইনকাম করা যায়।এই সেক্টরে অনেকেই জড়িত আছে।অনেকে কম দামে বা একটু বেশি দামে ডোমেইন কিনে রাখে।পরবর্তীতে সেই ডোমেইন অনেক বেশি দামে বিক্রি করে থাকে।যেমন, মনে করুন আপনি একটি ডোমেইন কিনলেন ১০০০ টাকা দিয়ে।পরবর্তীতে সেটি আপনি অনেক ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।তবে ডোমেইন বিক্রি করে টাকা ইনকাম করতে চাইলে আপনাকে কোয়ালিটি ডোমেইন কিনতে হবে।
ডোমেইন বিজনেস করে টাকা ইনকাম
আপনি যদি ডোমেইন বিজনেস করে টাকা ইনকাম করতে চান,তবে অবশ্যই এটি একটি ভালো সেক্টর।এই সেক্টরে আপনি যদি ডোমেইন বিষয়ে অভিজ্ঞ হন,তবে অবশ্যই অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।অনেকেই ডোমেইন বিজনেস করে একটি ডোমেইন বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে থাকে।তবে আপনি যদি ডোমেইন বিজনেস করতে চান,তবে আপনাকে ২টি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।এগুলো হলো :
- ডোমেইন মার্কেটপ্লেস
- ডোমেইন কোয়ালিটি
ডোমেইন নিয়ে যেহুতু বিজনেস করবেন,তাই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।যে জিনিস নিয়ে আমরা বিজনেস করবো,সেটি সম্পর্কে তো আমাদের ধারণা রাখতেই হবে।তো চলুন,এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ডোমেইন মার্কেটপ্লেস
আমরা বাজার থেকে আমাদের চাহিদা মত পণ্য ক্রয় করে থাকি।ডোমেইন ক্রয় বিক্রয় করার জন্য রয়েছে আলাদা মার্কেটপ্লেস।যেখানে শুধুমাত্র ডোমেইন কেনা বেচা হয়।নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় ডোমেইন মার্কেটপ্লেস তুলে ধরলাম
- Sedo
- Flippa
- Godaddy
- Namepros
ডোমেইন বিজনেস করে একটি ডোমেইন অনেক ভালো দামে বিক্রি করতে হলে আপনাকে এই মার্কেটপ্লেস গুলোতে ডোমেইন বিক্রয় করতে হবে।ডোমেইন বিক্রি করার জন্য আপনার ডোমেইনটি অবশ্যই কোয়ালিটি টপ লেভেল ডোমেইন হতে হবে।তবেই অনেক ভালো দামে ডোমেইন বিক্রি করতে পারবেন।তবে এই মার্কেটপ্লেস গুলোতে ডোমেইন বিক্রি করে রাখার জন্য ডোমেইন লিস্টিং করে রাখতে হয়।এজন্য আলাদা করে টাকা দিতে হয়।তবে ডোমেইন ভালো দামে বিক্রি হলে এসব খরচ কোনো ব্যাপার না।
ডোমেইন কোয়ালিটি
ডোমেইন বিজনেস করার জন্য আমাদের অবশ্যই কোয়ালিটি ডোমেইন কিনতে হবে।কোয়ালিটি ছাড়া কোনো ডোমেইন কেউ কিনতে চাইবে না,তাই বিক্রি করার উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই কোয়ালিটি ডোমেইন কিনে রাখতে হবে।একটি কোয়ালিটি ডোমেইন এর কয়েকটি দিক থাকে।এগুলো থাকলে বুঝা যায় ডোমেইনটি কোয়ালিটি ডোমেইন।এগুলো হলো :
- 2L/3L/4L Domain
- Meaningful Domain
- TLD Extension
2L/3L/4L Domain
এখানে 2L, 3L বা 4L দ্বারা বুঝানো হয়েছে ডোমেইনটি কত লেটার বা কত শব্দের। 2L Domain এ দুইটি শব্দ থাকে।আবার 3L ডোমেইনে তিনটি শব্দ থাকে। মার্কেটপ্লেসে এসব কম লেটার এর ডোমেইন এর চাহিদা সবথেকে বেশি।আপনার কাছে যদি ২/৩/৪ শব্দের কোনো ডোমেইন থাকে,তবে আপনি সেগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।
আরো পড়ুন :
Meaningful Domain
ডোমেইন ক্রয় বিক্রয় করার ক্ষেত্রে আপনি যদি ডোমেইন কিনেন,তবে মাথায় রাখবেন,আপনার ডোমেইনটি অবশ্যই meaningful domain হতে হবে।meaningful domain বলতে এমন ডোমেইন নেম যেটির কোনো মানে আছে।অর্থাৎ অর্থবোধক ডোমেইন।যদি একটি ডোমেইনের মানে থাকে,তবে সেটি অনেক ভালো দামে মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করতে পারবেন। অর্থবোধক নয় এমন ডোমেইন কেউ কিনতে চাইবে না।
TLD Extension
ডোমেইন কি এবং ডোমেইনের এক্সটেনশন কি সেটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন।সবগুলো ডোমেইন এক্সটেনশন কিন্তু জনপ্রিয় না।ডোমেইন বিজনেস করার জন্য আমাদের অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন এক্সটেনশন এর ডোমেইন কিনতে হবে।যেমন .com যুক্ত কোনো ডোমেইন।সবথেকে জনপ্রিয় ডোমেইন এক্সটেনশন হলো .com । অনেকেই তো .com কেই শুধু ডোমেইন হিসেবে ভেবে থাকে।তাই,ডোমেইন কিনতে গেলে আমাদের অবশ্যই TLD Extension এর ডোমেইন কিনতে হবে।তবেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আমি ডোমেইন কি , ডোমেইন এক্সটেনশন কি , ডোমেইনের প্রকারভেদ , ডোমেইন কিভাবে এবং কোথায় থেকে কিনবেন সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।এছাড়াও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আপনি একটি ডোমেইন কিনে কিভাবে বিজনেস করতে পারেন।ডোমেইন বিজনেস করতে গেলে আপনাকে কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি,আপনি ডোমেইন সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
এছাড়াও যদি কোনো কিছু ছেড়ে থাকি,তবে অবশ্যই জানাবেন।আমি চেষ্টা করবো সেটি নিয়ে আবারও বিস্তারিত আলোচনা করতে।আজকের মত এতটুকুই।আশা করছি পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।আপনার যদি কোনো বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ থাকে,তবে মন্তব্য করবেন।আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো সেটি নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখতে।